মরিচ চাষে বীজ প্রস্তুতি ও বপন পদ্ধতি
Open Calculator
মরিচ চাষে বীজ প্রস্তুতি ও বপন পদ্ধতি
মরিচ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। সফল মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত বীজ প্রস্তুতি ও সঠিক বপন পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন মরিচের বীজ প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বপন পর্যন্ত সমস্ত ধাপ বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
উপযুক্ত বীজ নির্বাচন
সফল মরিচ চাষের প্রথম ধাপ হল উন্নত মানের বীজ নির্বাচন। মরিচের ক্ষেত্রে:
- বীজ সংগ্রহের জন্য পূর্ণ পরিপক্ক, রোগমুক্ত ও সুস্থ গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করুন
- লাল রঙের পুষ্ট ও পরিপক্ক ফল বীজের জন্য নির্বাচন করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমপক্ষে ৮০% হওয়া উচিত
- স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খায় এমন জাত বেছে নিন
বাংলাদেশে জনপ্রিয় মরিচের জাতগুলো হল: বারি মরিচ-১, বারি মরিচ-২, বারি মরিচ-৩, বারি হাইব্রিড মরিচ-১ ইত্যাদি।
বীজ প্রস্তুতির পদ্ধতি
১. বীজ সংগ্রহ ও শুকানো:
- পরিপক্ক লাল মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন
- সংগৃহীত মরিচ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন
- শুকনো মরিচ থেকে বীজগুলো বের করুন
- বীজগুলো পুনরায় ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিন যাতে আর্দ্রতা ৮-১০% এ নেমে আসে
২. বীজ শোধন:
- প্রতি কেজি বীজের জন্য ২-৩ গ্রাম ক্যাপটান/থিরাম/ভিটাভেক্স ব্যবহার করে বীজ শোধন করুন
- বীজ শোধন করলে বীজবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কম হয়
- শোধন করা বীজ ছায়ায় শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন
৩. বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা:
- চাষের আগে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করে নিন
- একটি পাত্রে ভেজা কাপড় বা টিস্যু পেপার রেখে তার উপর ১০০টি বীজ রাখুন
- ৭-১০ দিন পর অঙ্কুরিত বীজের সংখ্যা গণনা করুন
- যদি ৮০ বা তার বেশি বীজ অঙ্কুরিত হয়, তাহলে বীজের গুণগত মান ভালো
বীজতলা তৈরি ও বপন
১. বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়:
- সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস মরিচের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়
- গ্রীষ্মকালীন মরিচের জন্য জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বীজতলা তৈরি করা যায়
২. বীজতলা তৈরি:
- উঁচু জমিতে ১ মিটার প্রস্থ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দৈর্ঘ্যের বীজতলা তৈরি করুন
- মাটি ঝুরঝুরে করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে নিন
- প্রতি বর্গমিটারে ৫-৭ কেজি পচা গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০-২৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করুন
- মাটির সাথে সার ভালোভাবে মিশিয়ে বেড তৈরি করুন
- বেডের উচ্চতা ১৫-২০ সেমি রাখুন
৩. বীজ বপন:
- বীজতলায় সারিতে বীজ বপন করুন
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫-৭ সেমি রাখুন
- বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ১-২ সেমি রাখুন
- বীজের গভীরতা ০.৫-১ সেমি রাখুন
- প্রতি শতাংশ জমিতে চারা তৈরির জন্য ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ লাগে
- বীজ বপনের পর হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিন
- চাটাই বা খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিন (অঙ্কুরোদগম না হওয়া পর্যন্ত)
৪. বীজতলা পরিচর্যা:
- প্রতিদিন সকালে ও বিকালে হালকা সেচ দিন
- অঙ্কুরোদগম হওয়ার পর চাটাই বা খড় সরিয়ে ফেলুন
- চারা ২-৩ পাতা বিশিষ্ট হলে প্রতি বর্গমিটারে ৫-৭ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন
- প্রয়োজনে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা নিন
মূল জমিতে চারা রোপণ
- ৩০-৩৫ দিন বয়সের ৪-৬ পাতাবিশিষ্ট সুস্থ-সবল চারা মূল জমিতে রোপণ করুন
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি রাখুন
- বিকেলের দিকে চারা রোপণ করুন এবং রোপণের পর সেচ দিন
- প্রথম কয়েকদিন রোদের তীব্রতা থেকে চারাগুলোকে রক্ষা করুন
বীজ সংরক্ষণ
ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য বীজ সংরক্ষণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখুন:
- বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে নিন (আর্দ্রতা ৮-১০%)
- বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন যেমন - কাঁচের জার, প্লাস্টিকের কৌটা, পলিথিন ব্যাগ
- সংরক্ষণের আগে বীজের সাথে নিমপাতা গুঁড়া মিশিয়ে নিন (প্রতি কেজি বীজে ২০-৩০ গ্রাম)
- শীতল ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন
- সংরক্ষিত বীজ পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখুন
মরিচ চাষে উন্নত বীজ নির্বাচন ও সঠিক বপন পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফলন বাড়ে এবং রোগবালাই কম হয়। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাকে সফলভাবে মরিচ চাষে সহায়তা করবে।