SofolChashi বগুরা, বাংলাদেশ
+880 1956 734 683
Mail Support: superadmin@sofolchashi.com
সরিষা বাংলাদেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তেল ফসল। দেশে খাদ্য তেলের চাহিদা পূরণে সরিষা একটি প্রধান উৎস হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়, যা থেকে প্রায় ৩.৮ লক্ষ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হয়। কিন্তু এটি আমাদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল, ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করতে হয়। সরিষা চাষে সফলতা অর্জনের প্রধান শর্ত হল উন্নত মানের বীজ নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতিতে বপন করা।
২০২৪-২০২৫ সালের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে:
সরিষা চাষ প্রধানত রবি মৌসুমে করা হয় এবং দেশের উত্তরাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এর চাষ বেশি হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক উদ্যোগে উন্নত জাতের সরিষার প্রচলন বাড়ছে, যা ফলনের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে উদ্ভাবিত সরিষার উন্নত জাতসমূহ:
বারি সরিষা-১৪:
গড় ফলন: ১.৮-২.০ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৮৫-৯০ দিন
বিশেষত্ব: অল্টারনারিয়া পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধী
বারি সরিষা-১৭:
গড় ফলন: ১.৬-১.৮ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৮০-৮৫ দিন
বিশেষত্ব: অল্টারনারিয়া ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী, তেলের পরিমাণ ৪২-৪৫%
বারি সরিষা-১৮:
গড় ফলন: ২.০-২.২ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৮৫-৯০ দিন
বিশেষত্ব: স্বল্প সময়ে ফলন বেশি, শুষ্ক পরিস্থিতি সহনশীল
টরি-৭:
গড় ফলন: ১.২-১.৪ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৭০-৭৫ দিন
বিশেষত্ব: অল্প সময়ে পাকে, ধান-সরিষা-ধান পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত
বিনাসরিষা-৯:
গড় ফলন: ১.৮-২.১ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৮০-৮৫ দিন
বিশেষত্ব: লবণাক্ততা সহনশীল, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত
বিনাসরিষা-১০:
গড় ফলন: ১.৯-২.২ টন/হেক্টর
জীবনকাল: ৮৫-৯০ দিন
বিশেষত্ব: খরা সহনশীল, তেলের পরিমাণ ৪৪%
সরিষা চাষে সফলতার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল সঠিক বীজ নির্বাচন। বীজ নির্বাচনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে:
প্রত্যয়িত বীজ ব্যবহার: সরকারি বা অনুমোদিত বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়িত বীজ সংগ্রহ করুন।
বীজের গুণগত মান:
বীজের আকার একই রকম হওয়া চাই
বীজ পরিষ্কার, চকচকে ও ঝলমলে হতে হবে
বীজ ভাঙ্গা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়
সকল বীজের রং একই রকম হওয়া প্রয়োজন
অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা: ভালো বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমপক্ষে ৮০-৮৫% হওয়া উচিত।
বীজের আদ্রতা: বীজের আদ্রতা ৮-১০% এর মধ্যে থাকা উচিত।
জাত নির্বাচন: এলাকার মাটি, জলবায়ু এবং চাষের মৌসুম অনুযায়ী উপযুক্ত জাত নির্বাচন করুন।
বীজ বপনের আগে সঠিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম হার বাড়ে এবং চারা সুস্থ থাকে।
বীজ বপনের আগে অবশ্যই বীজ শোধন করতে হবে। এতে বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায় এবং চারার প্রাথমিক বৃদ্ধি ভালো হয়।
প্রক্রিয়া:
বীজ প্রাইমিং অল্প পানিতে বীজ ভিজিয়ে রাখার একটি পদ্ধতি, যা অঙ্কুরোদগম হার বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রক্রিয়া:
সরিষা লেগুমিনাস জাতীয় ফসল হওয়ায় রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বীজ শোধন করলে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে।
প্রক্রিয়া:
সরিষা চাষের জন্য সঠিক জমি প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরিষার বীজ ছোট হওয়ায় ভালোভাবে জমি প্রস্তুত করতে হবে।
সরিষা চাষের জন্য দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ বা এটেল-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। মাটির pH মান ৫.৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকা উত্তম।
প্রতি হেক্টর জমিতে নিম্নলিখিত সার প্রয়োগ করা যেতে পারে:
|
সারের নাম |
পরিমাণ (কেজি/হেক্টর) |
প্রয়োগের সময় |
|
ইউরিয়া |
১৫০-১৮০ |
৩৩% শেষ চাষের সময়, ৩৩% চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর, ৩৩% ফুল আসার আগে |
|
টিএসপি |
১৮০-২০০ |
শেষ চাষের সময় |
|
এমওপি |
৮০-১০০ |
শেষ চাষের সময় |
|
জিপসাম |
১২০-১৫০ |
শেষ চাষের সময় |
|
বোরন |
১০-১২ |
শেষ চাষের সময় |
|
জিংক |
৫-৭ |
শেষ চাষের সময় |
|
গোবর/জৈব সার |
৫-৬ টন |
প্রথম চাষের সময় |
সরিষা বপনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এলাকা ও জমির অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিতে হবে।
এই পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুত করার পর বীজ সমানভাবে জমিতে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হালকা চাষ দিয়ে বীজগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
সুবিধা:
অসুবিধা:
এই পদ্ধতিতে সারি করে বীজ বপন করা হয়। সারিতে বপন করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং পরিচর্যা সহজ হয়।
প্রক্রিয়া:
সুবিধা:
এ পদ্ধতিতে জমিতে ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচু বেড তৈরি করে তাতে বীজ বপন করা হয়।
সুবিধা:
এ পদ্ধতিতে আমন ধানের জমিতে ধান কাটার ৭-১০ দিন আগে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
সুবিধা:
সরিষা বপনের সময় এলাকা ও জাত অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে:
বিলম্বে বপন করলে ফলন কমে যায় এবং পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয়।
উত্তর: সরিষার বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করার সহজ উপায় হল:
উত্তর: সরিষা বপনের সময় জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা উচিত, তবে অতিরিক্ত পানি থাকা উচিত নয়। জমির আর্দ্রতা ৬০-৭০% হলে বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত। যদি জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকে, তাহলে বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে।
উত্তর: প্রতি হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার জন্য সুপারিশকৃত সারের মাত্রা হল:
উত্তর: সরিষার বীজ শোধনের সুবিধাসমূহ:
সরিষা চাষে সফলতা অর্জনের জন্য সঠিক বীজ নির্বাচন, বীজ প্রস্তুতি এবং উপযুক্ত বপন পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে সরিষার ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশে খাদ্য তেলের ঘাটতি পূরণে সরিষা চাষ বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী সরিষা উৎপাদন বাড়াতে হলে আমাদের কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে হবে। সঠিক বীজ প্রস্তুতি এবং বপন পদ্ধতি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
"সফল চাষী" একটি স্মার্ট অ্যাপ যেখানে কৃষকরা আধুনিক চাষাবাদ, ফসলের তথ্য, রোগবালাই প্রতিরোধ এবং বাজারদরের আপডেট সহজেই পেতে পারেন। সফল চাষীর সাথে কৃষি হবে আরও সহজ, লাভজনক ও প্রযুক্তিনির্ভর।
