SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

ভাইরাসজনিত রোগ মরিচ চাষে

ভাইরাসজনিত রোগ মরিচ চাষে

Open Calculator

ভাইরাসজনিত রোগ মরিচ চাষে

মরিচ বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। তবে এই ফসলটি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা ফলন ও গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। আসুন মরিচ চাষে দেখা যাওয়া প্রধান ভাইরাসজনিত রোগ, তাদের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

মরিচের প্রধান ভাইরাসজনিত রোগসমূহ

১. ক্যাপসিকাম মোজাইক ভাইরাস (CMV)

এটি মরিচের সবচেয়ে সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগগুলির মধ্যে একটি। পাতায় হলুদ ও সবুজ রঙের পরিবর্তনশীল দাগ দেখা দেয়, যা মোজাইক প্যাটার্ন তৈরি করে। আক্রান্ত গাছ বামন হয়ে যেতে পারে এবং ফলন ৭০-৮০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

২. টব্যাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV)

এই ভাইরাস পাতায় মোজাইক প্যাটার্ন সৃষ্টি করে, পাতা কুঁকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এটি চারা অবস্থায় আক্রমণ করলে গাছ মারাও যেতে পারে।

৩. কিউকামবার মোজাইক ভাইরাস (CMV)

পাতায় হলুদ মোজাইক প্যাটার্ন, পাতা কুঁকড়ানো, এবং ফল বিকৃত হওয়া এর প্রধান লক্ষণ। এটিও ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।

৪. টমেটো স্পটেড উইল্ট ভাইরাস (TSWV)

এটি মরিচের একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। পাতায় নেক্রোটিক দাগ, কান্ড ও ডগায় ঝলসানো রোগের লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত ফল বিকৃত হয় এবং তাতে বাদামি বা হলুদ বলয়াকার দাগ দেখা যায়।

৫. চিলি ভেইন মটল ভাইরাস (ChiVMV)

এটি শিরা-বিবর্ণতা সৃষ্টি করে এবং পাতা কুঁকড়ে যায়। ফল ছোট হয়ে যায় এবং বিকৃত হতে পারে।

লক্ষণসমূহ

ভাইরাসজনিত রোগের সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  • পাতায় মোজাইক প্যাটার্ন (হলুদ-সবুজ দাগ)
  • পাতা কুঁকড়ে যাওয়া বা বিকৃত হওয়া
  • গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
  • ফল ছোট ও বিকৃত হওয়া
  • পাতায় শিরা-বিবর্ণতা
  • পাতা ও ফলে বলয়াকার দাগ
  • গাছের ডগা মরে যাওয়া
  • অকালে ফুল ঝরে যাওয়া

সংক্রমণের কারণ ও বিস্তার

ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান কারণগুলি হল:

  1. পোকামাকড়: জাবপোকা, থ্রিপস, শাদা মাছি ইত্যাদি ভাইরাস বহন করে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়।
  2. যান্ত্রিক সংক্রমণ: আক্রান্ত গাছ স্পর্শ করার পর সুস্থ গাছে কাজ করা।
  3. আক্রান্ত বীজ: কিছু ভাইরাস বীজবাহিত হতে পারে।
  4. আগাছা: কিছু আগাছা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

ভাইরাসজনিত রোগের কোনো সরাসরি চিকিৎসা নেই, তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি:

১. রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার

  • স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খায় এমন রোগ প্রতিরোধী মরিচের জাত বেছে নিন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) থেকে উদ্ভাবিত রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন।

২. বীজ শোধন

  • সুস্থ ও সার্টিফাইড বীজ ব্যবহার করুন।
  • বীজ বপনের আগে ৫০°C তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন (টব্যাকো মোজাইক ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে)।

৩. পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ

  • জাবপোকা, থ্রিপস, সাদা মাছি ইত্যাদি ভাইরাস বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করুন।
  • নিমতেল (৫ মিলি/লিটার) বা সাবান পানি (৫ গ্রাম/লিটার) স্প্রে করুন।
  • প্রয়োজনে জৈব কীটনাশক বা অনুমোদিত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন।
  • হলুদ আঠালো ফাঁদ (১০টি/শতাংশ) ব্যবহার করুন।

৪. জৈবিক নিয়ন্ত্রণ

  • ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি যেমন জৈবিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
  • সুস্থ মাটি ব্যবস্থাপনার জন্য জৈব সার ব্যবহার করুন।

৫. যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ

  • আক্রান্ত গাছ দেখলেই উপড়ে ফেলুন ও পুড়িয়ে ফেলুন।
  • ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখুন কারণ অনেক আগাছা ভাইরাসের বাহক হতে পারে।
  • ফসল পর্যায়ক্রমিক চাষ করুন (বিশেষ করে ভাইরাস-সংবেদনশীল ফসল একই জমিতে পর পর বছরে চাষ না করা)।

৬. স্বাস্থ্যকর চারা উৎপাদন

  • নার্সারিতে নেট হাউসে চারা উৎপাদন করুন।
  • চারা রোপণের আগে শক্তিশালী ও সুস্থ চারা বাছাই করুন।

৭. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

  • ভাইরাস প্রতিরোধে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (১০ গ্রাম/লিটার) বা দুধ স্প্রে (১০%) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ভাইরাসের বৃদ্ধি কমাতে ২% নিমপাতার নিযাস স্প্রে করুন।

সামগ্রিক সুপারিশ

  1. সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM) পদ্ধতি অবলম্বন করুন, যেখানে রাসায়নিক, জৈবিক ও যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি একত্রিত করা হয়।
  2. পর্যবেক্ষণ: নিয়মিত জমি পরিদর্শন করুন এবং প্রাথমিক পর্যায়েই আক্রান্ত গাছ চিহ্নিত করুন।
  3. স্বাস্থ্যকর মাটি: কম্পোস্ট ও জৈব সার ব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করুন, যা গাছের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  4. সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা: ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করুন এবং পাতায় পানি দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
  5. সময়মতো রোপণ: ভাইরাস বাহক পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকে এমন সময়ে চাষ করুন।

মরিচ চাষে সফলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, কারণ একবার ভাইরাস আক্রমণ হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo