মরিচ চাষে মরিচের ক্যাংকার রোগ
Open Calculator
মরিচ চাষে মরিচের ক্যাংকার রোগ
মরিচ চাষে ক্যাংকার রোগ একটি গুরুতর সমস্যা যা উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং এর প্রতিকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যাংকার রোগের কারণ
মরিচের ক্যাংকার রোগ মূলত জ্যান্থোমোনাস ক্যাম্পেস্ট্রিস পিভি. ভেসিকাটোরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত বীজ, মাটি, ফসলের অবশিষ্টাংশ বা কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। উচ্চ আর্দ্রতা (80% এর বেশি) এবং গরম তাপমাত্রা (25-30°C) এই রোগের বিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
রোগের লক্ষণ
ক্যাংকার রোগের প্রধান লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:
- পাতায়: প্রথমে পাতার নীচে ছোট ছোট জলভরা দাগ দেখা যায়, যা পরে বাদামি-কালো রঙের হয়ে যায়। দাগগুলি ক্রমশ বড় হয়ে ঘা হতে পারে এবং চারপাশে হলুদ রিং দেখা দিতে পারে।
- কাণ্ডে: কান্ডে লম্বাটে ফাটল বা ক্ষত দেখা দেয় যা বাদামি রঙের হয়।
- ফলে: মরিচের ফলে প্রথমে ছোট উঁচু দাগ দেখা যায়, যা পরে ফেটে কালচে-বাদামি ক্ষতে পরিণত হয়। এই ক্ষতগুলি শুকিয়ে কর্কশ হয়ে যায়।
- বীজে: আক্রান্ত বীজ দেখতে চুপসানো এবং বিবর্ণ হয়।
রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার: সার্টিফাইড বা রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন।
- শস্য পর্যায়ক্রম: একই জমিতে বারবার মরিচ না লাগিয়ে 2-3 বছর পর্যায়ক্রমে অন্য ফসল চাষ করুন।
- জমি পরিষ্কার রাখা: আগের মৌসুমের ফসলের অবশিষ্টাংশ ভালভাবে পরিষ্কার করুন কারণ এতে রোগের জীবাণু বেঁচে থাকতে পারে।
- বীজ শোধন: বীজ বপনের আগে গরম পানিতে (50°C তাপমাত্রায় 25 মিনিট) বা ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করুন।
- সঠিক সারিতে রোপণ: গাছ থেকে গাছের দূরত্ব পর্যাপ্ত রাখুন যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়:
- কপার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক: কপার অক্সিক্লোরাইড (ব্লাইটক্স), কপার হাইড্রক্সাইড, বা কপার সালফেট (বর্দো মিশ্রণ) প্রয়োগ করুন। প্রতি 15 দিন অন্তর স্প্রে করুন।
- জৈব নিয়ন্ত্রণ: ট্রাইকোডার্মা বা সিউডোমোনাস ভিত্তিক জৈব ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- অ্যান্টিবায়োটিক স্প্রে: স্ট্রেপ্টোমাইসিন সালফেট + টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড (100 পিপিএম) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আক্রান্ত গাছ অপসারণ: মারাত্মক আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
- সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা: অত্যধিক আর্দ্রতা এড়াতে ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করুন এবং গাছের গোড়ায় পানি না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
পানিতে সেচের সময় সতর্কতা
সেচের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখবেন:
- সকাল বেলায় সেচ দিন, যাতে গাছের পাতা সূর্যাস্তের আগেই শুকিয়ে যায়।
- হাইগ্রোফোবিক (জল প্রতিরোধী) স্প্রে ব্যবহার করুন যাতে পাতার উপর পানি না থাকে।
- ওভারহেড সিঞ্চন পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে রোগের জীবাণু একটি গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়াতে পারে।
সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা
সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) অনুসরণ করা:
- রোগ প্রতিরোধী জাত বেছে নিন যেমন - পুসা জ্বালা, পুসা সদাবাহার, পান্তা মরিচ ইত্যাদি।
- বীজতলায় রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করুন।
- নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রাথমিক লক্ষণ দেখা মাত্র ব্যবস্থা নিন।
- ফসল কাটার পর জমি ভালভাবে পরিষ্কার করুন এবং অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।
- সারা বছর জমি খালি না রেখে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির ফসল লাগান।
ক্যাংকার রোগ নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এর প্রকোপ কমিয়ে মরিচের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রোগ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।