মরিচ চাষে মরিচের থ্রিপস পোকা সমস্যা ও প্রতিকার
Open Calculator
মরিচ চাষে মরিচের থ্রিপস পোকা: সমস্যা ও প্রতিকার
ভূমিকা:
বাংলাদেশে মরিচ একটি জনপ্রিয় এবং অর্থকরী ফসল। এটি রান্নার অন্যতম প্রধান উপাদান হওয়ায় সারা বছরই এর চাহিদা থাকে। তবে মরিচ চাষে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণে ফলন অনেক সময় কমে যায়। তেমনই একটি ক্ষতিকর পোকা হলো থ্রিপস (Thrips)। এই পোকা মরিচ গাছের পাতা, ফুল ও ফল নষ্ট করে কৃষকের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
থ্রিপস পোকা কি?
থ্রিপস হলো ছোট আকৃতির, সরু গঠনবিশিষ্ট, হলুদাভ-বাদামী বা কালচে রঙের একটি পোকা। এর দৈর্ঘ্য সাধারণত ১–২ মিমি। এরা পাতা এবং ফুলের কোষের রস শোষণ করে এবং গাছে দাগ ও বিকৃতি সৃষ্টি করে।
থ্রিপস পোকার আক্রমণের লক্ষণ:
- পাতায় রূপালি রঙের দাগ: থ্রিপসের আক্রমণে পাতার উপর রূপালি বা বাদামী দাগ দেখা যায়।
- পাতা মোড়ানো ও শুকিয়ে যাওয়া: আক্রান্ত পাতা কুঁচকে যায় এবং শুকিয়ে পড়ে যায়।
- ফুল ও ফল ঝরে পড়া: গাছের ফুল বা কচি মরিচ ঝরে যায় বা বিকৃত হয়ে যায়।
- উৎপাদন হ্রাস: ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায় এবং মরিচের গুণগত মানও খারাপ হয়।
থ্রিপস আক্রমণের কারণ:
- অতিরিক্ত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া থ্রিপসের বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক।
- গাছে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া বা গাছ দুর্বল হলে পোকার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- জমিতে আগাছা বেশি থাকলে থ্রিপস লুকিয়ে থেকে সহজে আক্রমণ করে।
প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা:
১. জৈব পদ্ধতি:
- হলুদ রঙের স্টিকি ট্র্যাপ ব্যবহার করে থ্রিপস পোকা ধরতে পারেন।
- নিম বীজের নির্যাস (৫%) বা নিম তেল (৫-১০ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে) স্প্রে করা যেতে পারে।
- রসুন, লঙ্কা ও আদা মিশ্রিত বোটানিক্যাল কীটনাশক তৈরি করে ছিটানো।
২. সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ:
- রোগাক্রান্ত গাছ ও পাতা দ্রুত তুলে ফেলা।
- জমিতে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার রাখা।
- ফসল চক্র পরিবর্তন বা রোটেশন ফলো করা।
৩. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ:
যদি থ্রিপসের আক্রমণ অতিরিক্ত হয়, তবে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে:
- ইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid) – ০.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটানো।
- স্পিনোসাড (Spinosad) – ১ মিলি/লিটার পানিতে।
- থায়ামেথোক্সাম (Thiamethoxam) – ০.৫ গ্রাম/লিটার।
বিশেষ সতর্কতা: কীটনাশক প্রয়োগের পর অন্তত ৫-৭ দিন ফসল না তোলা উচিত এবং নির্দেশিত মাত্রা মেনে চলা উচিত।
উপসংহার:
থ্রিপস পোকা মরিচ চাষের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হলেও সঠিক সময়ে সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ এবং জৈব ও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এর ক্ষতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত পোকা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ফলন ও গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে।
আপনি চাইলে এই বিষয়ে পোস্টার, তথ্যচিত্র বা চাষি হ্যান্ডবুকের জন্য সংক্ষিপ্ত সংস্করণও তৈরি করে দিতে পারি। চাইবেন কি?