SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

সরিষার কান্ড পচা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার

সরিষার কান্ড পচা রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার

সরিষার কান্ড পচা রোগ: লক্ষণ ও প্রতিকার

সরিষা বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ তৈলবীজ ফসল, যা কান্ড পচা রোগে আক্রান্ত হলে উল্লেখযোগ্য ফলন হ্রাস হতে পারে। আসুন এই রোগের বিস্তারিত বিবরণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানা যাক।

রোগের কারণ

সরিষার কান্ড পচা রোগ মূলত স্ক্লেরোটিনিয়া স্ক্লেরোটিওরাম (Sclerotinia sclerotiorum) নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি একটি মাটিবাহিত রোগজীবাণু যা আর্দ্র ও শীতল আবহাওয়ায় দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

রোগের সময়কাল

সরিষার কান্ড পচা রোগ সাধারণত নিম্নলিখিত সময়ে দেখা যায়:

  • প্রধান সময়কাল: শীতকালে, বিশেষত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে
  • আবহাওয়া: তাপমাত্রা 15-20°C এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা 80% এর বেশি হলে
  • গাছের অবস্থা: সরিষা গাছের ফুল আসার সময় থেকে শুরু করে ফল পাকার আগ পর্যন্ত

রোগের লক্ষণ

সরিষার কান্ড পচা রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল:

  1. প্রাথমিক লক্ষণ: কান্ডের গোড়ায় বা শাখায় হালকা বাদামি রঙের পানি-ভেজা দাগ দেখা যায়।
  2. উন্নত পর্যায়: আক্রান্ত স্থান ক্রমশ সাদা রঙের হয়ে যায় এবং তুলার মতো ছত্রাকের বৃদ্ধি দেখা যায়।
  3. কান্ড ফেটে যাওয়া: রোগ বাড়তে থাকলে কান্ড ফেটে যায় এবং অভ্যন্তরে কালো রঙের স্ক্লেরোটিয়া (ছত্রাকের জীবাণু) দেখা যায়।
  4. শুকিয়ে যাওয়া: আক্রান্ত অংশের উপরের সমস্ত অংশ শুকিয়ে যায় এবং গাছ মারা যায়।
  5. ফলন হ্রাস: সময়মত প্রতিকার না করলে শতকরা 10-70% পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।

প্রতিকার ব্যবস্থা

সরিষার কান্ড পচা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  1. ফসল পর্যায়ক্রম: একই জমিতে প্রতি বছর সরিষা চাষ না করে 3-4 বছর পর্যায়ক্রমে অন্য ফসল (যেমন ধান, গম) চাষ করুন।
  2. রোগ প্রতিরোধী জাত: রোগ প্রতিরোধী সরিষার জাত যেমন পুসা জয়কিষান, পুসা বোল্ড, বারি সরিষা-14 ইত্যাদি বপন করুন।
  3. স্বাস্থ্যকর বীজ: রোগমুক্ত, সুস্থ বীজ ব্যবহার করুন।
  4. সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ: গাছ থেকে গাছের দূরত্ব বজায় রাখুন (সারি থেকে সারি 30 সেমি এবং গাছ থেকে গাছ 10 সেমি)।
  5. জমি পরিষ্কার: আগের ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন বা গভীরভাবে চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিন।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

   1. বীজ শোধন:

  • কার্বেন্ডাজিম (2 গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করুন।
  • ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি (4 গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।

    2. ছত্রাকনাশক স্প্রে:

  • কার্বেন্ডাজিম 50% WP (1 গ্রাম/লিটার পানি)
  • হেক্সাকোনাজোল 5% EC (1 মিলি/লিটার পানি)
  • টেবুকোনাজোল 25.9% EC (0.75 মিলি/লিটার পানি)
  • প্রোপিকোনাজোল 25% EC (1 মিলি/লিটার পানি)

    3. রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাওয়ার সাথে সাথে 10-15 দিন অন্তর 2-3 বার স্প্রে করুন।

জৈবিক নিয়ন্ত্রণ

  1. ট্রাইকোডার্মা সাসপেনশন: ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম 2% (20 গ্রাম/লিটার পানিতে) মিশিয়ে স্প্রে করুন।
  2. নিম তেল: 3 মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
  3. গারলিক এক্সট্রাক্ট: 5% গারলিক এক্সট্রাক্ট স্প্রে করুন।

বিশেষ সতর্কতা

  1. রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাওয়ার সাথে সাথেই প্রতিকার শুরু করুন।
  2. ছত্রাকনাশক প্রয়োগের সময় নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করুন (দস্তানা, মাস্ক ইত্যাদি পরুন)।
  3. আক্রান্ত গাছগুলি উপড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন যাতে রোগ অন্য গাছে ছড়াতে না পারে।
  4. ফসল সংগ্রহের পর জমি পরিষ্কার করুন এবং অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলুন।

সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করলে সরিষার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo