SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

সরিষার ক্লাব রুট রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার

সরিষার ক্লাব রুট রোগ লক্ষণ ও প্রতিকার

Open Calculator

সরিষার ক্লাব রুট রোগ: লক্ষণ ও প্রতিকার

সরিষা বাংলাদেশ ও ভারতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তৈলবীজ ফসল। কিন্তু এই ফসলটি বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে ক্লাব রুট রোগ একটি মারাত্মক সমস্যা।

রোগের পরিচিতি

ক্লাব রুট (Club Root) রোগ প্লাসমোডিওফোরা ব্রাসিকি (Plasmodiophora brassicae) নামক একটি মাইক্রোস্কোপিক পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি ক্রুসিফেরাস পরিবারের বিভিন্ন ফসল যেমন - সরিষা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি ফসলের শিকড়কে আক্রমণ করে। বাংলাদেশে এই রোগকে "কড়িঝরা রোগ" বা "গলা ফোলা রোগ" নামেও চেনা হয়।

রোগের লক্ষণসমূহ

সরিষার ক্লাব রুট রোগের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:

  1. শিকড়ের বিকৃতি: শিকড় অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় এবং ক্লাব বা গদার আকৃতি ধারণ করে। শিকড়ে বিভিন্ন আকারের গিট দেখা যায়।
  2. পাতার লক্ষণ: গাছের উপরিভাগে পাতা হলুদ হয়ে যায় (ক্লোরোসিস), পাতা কুঁকড়ে যায় এবং দিনের বেলায় ঝুলে পড়ে।
  3. গাছের বিকাশ: গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, বামন আকৃতির হয়ে যায়।
  4. বিকৃত মূল: মূল শিকড়গুলি অস্বাভাবিকভাবে মোটা ও বাঁকা হয়ে যায়, যা পুষ্টি ও পানি শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।

সময়কাল: সাধারণত রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পর থেকে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

রোগের বিস্তার

এই রোগ নিম্নলিখিত উপায়ে বিস্তার লাভ করে:

  1. মাটির মাধ্যমে: রোগের বীজাণু (স্পোর) মাটিতে ৮-১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
  2. সেচের পানি দ্বারা: রোগাক্রান্ত জমি থেকে সেচের পানির মাধ্যমে অন্য জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে: মাটিযুক্ত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগ বিস্তার লাভ করে।
  4. উপযোগী পরিবেশ: আর্দ্র ও অম্লীয় মাটি (পিএইচ ৫.৭ এর নিচে) এই রোগের বিস্তারে সহায়ক।

প্রতিকার ব্যবস্থা

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  1. ফসল পর্যায়ক্রম: ৪-৫ বছরের জন্য একই জমিতে সরিষা বা অন্য ক্রুসিফেরাস পরিবারের ফসল চাষ না করা। ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলের সাথে পর্যায়ক্রমে চাষ করা।

  2. মাটির পিএইচ বৃদ্ধি:

  • চুন প্রয়োগ করে মাটির অম্লতা কমানো (পিএইচ ৭.২ এর উপরে)
  • হেক্টর প্রতি ২-৪ টন চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে
  • চুন প্রয়োগ ফসল রোপণের ৪-৬ সপ্তাহ আগে করা উচিত
  1. রোগমুক্ত চারা: সুস্থ বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করা।

  2. জমি পরিষ্কার: আক্রান্ত গাছের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে ফেলা ও পুড়িয়ে দেওয়া।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ

   1. বীজ শোধন:

  • ক্যাপটান বা থিরাম দিয়ে বীজ শোধন করা (প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম)
  • হিমেক্সাজল (৩ গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করা

    2. মাটি শোধন:

  • ফরমালিন (৪%) দিয়ে জমি শোধন করা
  • কার্বেন্ডাজিম (০.১%) দ্রবণ দিয়ে মাটি শোধন করা

    3. ছত্রাকনাশক প্রয়োগ:

  • ফ্লুয়াজিনাম (০.৩-০.৪ কেজি/হেক্টর) রোপণের আগে প্রয়োগ করা
  • ক্লোরথালোনিল প্রয়োগ করা যেতে পারে

জৈবিক নিয়ন্ত্রণ

  1. ট্রাইকোডার্মা: ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি অথবা ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম (৪-৫ কেজি/হেক্টর) মাটিতে প্রয়োগ করা।
  2. জৈব সার: গোবর সার ও কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ানো।

অতিরিক্ত পরামর্শ

  1. পানি নিষ্কাশন: জমিতে যেন পানি জমে না থাকে তার জন্য উত্তম নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
  2. সহনশীল জাত: ক্লাব রুট প্রতিরোধী বা সহনশীল সরিষার জাত ব্যবহার করা।
  3. স্যানিটেশন: কৃষি যন্ত্রপাতি ভালোভাবে পরিষ্কার করে অন্য জমিতে ব্যবহার করা।
  4. সময়মত শনাক্তকরণ: রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া।

সামগ্রিকভাবে, সরিষার ক্লাব রুট রোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম। এটি শুধু রাসায়নিক নয়, বরং কৃষি, জৈবিক এবং যান্ত্রিক পদ্ধতির সমন্বয়ে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo