SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

সরিষা ফসলে শুয়া পোকা আক্রমণের সময়, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি

সরিষা ফসলে শুয়া পোকা আক্রমণের সময়, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি

Open Calculator

সরিষা ফসলে শুয়া পোকা: আক্রমণের সময়, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি

 ভূমিকা

সরিষা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ তেলজাতীয় ফসল। তবে এর উৎপাদনে অন্যতম বাধা হলো বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ, যার মধ্যে শুয়া পোকা অন্যতম ভয়ংকর। এই পোকাটি সরিষার গাছের রস চুষে খায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

শুয়া পোকা কবে বেশি দেখা যায়?

শুয়া পোকা (Aphid) সাধারণত শীত মৌসুমে সরিষা গাছে আক্রমণ করে।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এদের আক্রমণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক ও ঠান্ডা থাকে, যা এই পোকামাকড়ের বিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
বিশেষ করে যখন ফসল ফুলে ও দানায় পরিণত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে, তখন এদের আক্রমণ তীব্র হয়।

আক্রমণের লক্ষণসমূহ

শুয়া পোকার আক্রমণের কয়েকটি সুস্পষ্ট লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:

  1. পাতার নিচে ছোট ছোট সবুজ বা কালচে পোকা দেখা যায়।
  2. পাতা ও ডালের রস চুষে খায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
  3. আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁচকে যায় এবং হলদে রঙ ধারণ করে
  4. ফুল ও বীজ গঠন ব্যাহত হয়, ফলে ফলন অনেক কমে যায়।
  5. পোকার দেহ নিঃসৃত মধুরসের কারণে গাছে কালো ছত্রাক (Sooty mold) দেখা দিতে পারে।

দমন পদ্ধতি

শুয়া পোকার দমন কৌশল তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. পরিচর্যা ও সংস্কারমূলক পদ্ধতি
২. জৈব পদ্ধতি
৩. রাসায়নিক পদ্ধতি

১. পরিচর্যা ও সংস্কারমূলক পদ্ধতি:

  • আগাম জাত বপন করলে শুয়া পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
  • নিয়মিত ক্ষেতে পর্যবেক্ষণ রাখা এবং আক্রান্ত গাছের অংশ ছেঁটে ফেলা।
  • পরিত্যক্ত গাছপালা ও আগাছা অপসারণ করে পোকার আশ্রয়স্থল ধ্বংস করা।

২. জৈব বা প্রাকৃতিক পদ্ধতি:

  • নিম বীজের নির্যাস (Neem extract) স্প্রে করা – এটি পোকার খাবার গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটায়।
  • সাবান মিশ্রিত পানি (৫% সাবান দ্রবণ) স্প্রে করা – পোকার দেহে লেগে তাদের মৃত্যু ঘটে।
  • প্রাকৃতিক শত্রু যেমন – লেডিবার্ড বিটল (Ladybird beetle) ব্যবহার করা যায় যারা শুয়া পোকা খেয়ে থাকে।

৩. রাসায়নিক পদ্ধতি:

যখন আক্রমণ ব্যাপক হয়, তখন রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে।
নিম্নলিখিত কীটনাশকসমূহ প্রয়োগ করা যেতে পারে:

বালাইনাশক

মাত্রা

প্রয়োগ পদ্ধতি

ইমিডাক্লোপ্রিড ২০ এসএল (Imidacloprid 20 SL)

প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি

স্প্রে করে দেয়া

অ্যাসিফেট ৭৫ এসপি (Acephate 75 SP)

প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম

স্প্রে করে দেয়া

থায়ামেথক্সাম ২৫ ডব্লিউজি (Thiamethoxam 25 WG)

প্রতি লিটার পানিতে ০.৩-০.৫ গ্রাম

ভালোভাবে স্প্রে করা

⚠️ সতর্কতা: রাসায়নিক ব্যবহার করলে ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন আগে প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। এবং স্প্রে করার সময় মাস্ক, গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক।

✅ উপসংহার

সরিষার উৎপাদনে শুয়া পোকার আক্রমণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সময়মতো সনাক্তকরণ এবং সঠিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলকে রক্ষা করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব ও একীভূত দমন কৌশল (IPM) ব্যবহার করলে দীর্ঘমেয়াদে পোকার প্রভাব হ্রাস পাবে এবং টেকসইভাবে উৎপাদন বজায় থাকবে।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo