সরিষায় সাধারণ পাতা সুরঙ্গকারী পোকা সময়, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি
Open Calculator
সরিষায় সাধারণ পাতা সুরঙ্গকারী পোকা: সময়, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি
পরিচিতি:
সরিষা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল ফসল। তবে এর উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এদের মধ্যে পাতা সুরঙ্গকারী পোকা (Leaf Miner) একটি অন্যতম ক্ষতিকর কীট। এই পোকা মূলত সরিষার পাতায় আক্রমণ করে এবং পাতার ভিতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাতা নষ্ট করে ফেলে, যার ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।
কোন সময় বেশি দেখা দেয়:
পাতা সুরঙ্গকারী পোকার আক্রমণ প্রধানত দেখা যায়:
- শীত মৌসুমে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে) — যখন সরিষা গাছের পাতা কোমল ও রসাল থাকে।
- এই পোকা গাছের বর্ধনশীল পর্যায়ে, অর্থাৎ চারা গজানোর ১৫-৩০ দিনের মধ্যে আক্রমণ শুরু করে।
উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের প্রজনন দ্রুত ঘটে। তাই বৃষ্টির পরে হালকা রোদ ও ঠান্ডা থাকা অবস্থায় পোকার বিস্তার বেশি হয়।
আক্রমণের লক্ষণ:
১. পাতায় আঁকাবাঁকা সাদা বা হালকা বাদামি রেখা দেখা যায় — এগুলো মূলত গর্ত বা সুড়ঙ্গ যা লার্ভা (শিশু পোকা) পাতার ভিতর খেয়ে তৈরি করে।
- পাতার রঙ পরিবর্তন হয় — আক্রান্ত স্থানে পাতার সবুজ রঙ উধাও হয়ে সাদা বা বাদামি হয়ে যায়।
- পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে — একাধিক পোকা একসঙ্গে আক্রমণ করলে পাতা শক্তি হারিয়ে মরে যায়।
- গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় — প্রচণ্ড আক্রমণে ফুল ও ফল ধরার ক্ষমতা কমে যায়।
দমন পদ্ধতি:
১. সংস্কৃতিক দমন:
- আক্রান্ত পাতা দ্রুত কেটে ফেলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
- গাছের চারপাশ পরিষ্কার রাখা এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
- জমির ফসল আবর্তনের মাধ্যমে পোকার জীবনচক্র ব্যাহত করা যায়।
২. যান্ত্রিক দমন:
- আক্রমণের শুরুর দিকে হাতে হাতে পোকা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা যেতে পারে।
- আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণবয়স্ক মাছি আকর্ষণ করে ধ্বংস করা যেতে পারে।
৩. জৈব/প্রাকৃতিক দমন:
- নিম তেল বা নিম বীজ নির্যাস (Neem seed extract, 5%) স্প্রে করা যেতে পারে। এটি প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে।
- বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট যেমন Parasitoid (যেমন: Diglyphus isaea) প্রয়োগ করলে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৪. রাসায়নিক দমন:
- যদি আক্রমণ অনেক বেশি হয় তবে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
- ইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid 17.8 SL) @ ০.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
- সাইপারমেথ্রিন (Cypermethrin 10 EC) ১ মিলি/লিটার হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বিঃদ্রঃ রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগের সময়:
- নিরাপদ ব্যবধান (Pre-harvest interval) মেনে চলতে হবে।
- খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় অতিরিক্ত বা অতিরিক্ত ঘনত্বে প্রয়োগ করা উচিত নয়।
উপসংহার:
সরিষা ফসলে পাতা সুরঙ্গকারী পোকার আক্রমণ সময়মতো শনাক্ত করে সঠিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ফসলের ক্ষতি কমানো সম্ভব। কৃষকদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সচেতনভাবে জৈব ও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।