SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

আলুর পাউডারী মিলডিউ রোগ কখন হয়, কী লক্ষণ এবং প্রতিরোধের কার্যকর উপায়

আলুর পাউডারী মিলডিউ রোগ কখন হয়, কী লক্ষণ এবং প্রতিরোধের কার্যকর উপায়

Open Calculator

আলুর পাউডারী মিলডিউ রোগ: কখন হয়, কী লক্ষণ এবং প্রতিরোধের কার্যকর উপায়

আলুর পাউডারী মিলডিউ একটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ যা আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সঠিক সময়ে রোগটি চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা না গেলে ফলনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব – কখন এই রোগ হয়ে থাকে, এর লক্ষণগুলো কী এবং প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য কী কী করণীয়।

পাউডারী মিলডিউ কী?

পাউডারী মিলডিউ হল এক ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ, যা মূলত Erysiphe বা Leveillula প্রজাতির ফাঙ্গাস দ্বারা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত গাছের পাতা ও কান্ডে আক্রমণ করে এবং সাদা বা ধূসর রঙের গুঁড়ার মতো আবরণ তৈরি করে।

উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন বাতাস চলাচল কম হয়।

পাউডারী মিলডিউয়ের সময়কাল

এই রোগ সাধারণত দেখা দেয়:

  • উষ্ণ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতার সময়
  • বর্ষার পরপরই
  • ঘনবসতিপূর্ণ আলুর ক্ষেতে, যেখানে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়

পাউডারী মিলডিউয়ের লক্ষণসমূহ

রোগটি প্রথম পর্যায়েই সনাক্ত করতে পারলে প্রতিরোধ সহজ হয়। লক্ষণগুলো হলো:

  • পাতার উপরে সাদা বা ধূসর গুঁড়ার মতো দাগ
  • পাতাগুলো ধীরে ধীরে হলুদ ও কুঁকড়ে যায়
  • গাছের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায় এবং টিউবার বা আলুর আকার ছোট হয়

যদি এই লক্ষণগুলো অবহেলা করা হয়, তাহলে তা দ্রুত পুরো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।

পাউডারী মিলডিউয়ের কারণ

এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে ছত্রাকের স্পোরের মাধ্যমে, যা বাতাস, পানি বা সংক্রমিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে আলু গাছে চলে আসে। সাধারণ কারণগুলো হলো:

  • ✅ উচ্চ আর্দ্রতা ও উষ্ণ তাপমাত্রা
  • ✅ ঘনবসতিপূর্ণ চাষ ও পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাব
  • ✅ অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার
  • ✅ সংক্রমিত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ জমিতে ফেলে রাখা

প্রতিরোধ ও দমন পদ্ধতি

প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো উপায়। নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার আলু ক্ষেতকে পাউডারী মিলডিউ থেকে রক্ষা করতে পারেন:

১. আক্রান্ত গাছের অংশ ধ্বংস করুন

সংক্রমিত পাতা বা গাছের অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন।

২. ক্ষেত পরিষ্কার রাখুন

নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা পরিষ্কার রাখুন।

৩. ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন

নিম্নলিখিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • রিডোমিল গোল্ড (ম্যানকোজেব + মেটালাক্সিল) – ২ গ্রাম/লিটার পানিতে
  • সালফার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক – কুমুলাস, গেইভেট, থিওভিট – ২-৪ গ্রাম/লিটার
  • কার্বেন্ডাজিম গ্রুপ – গোল্ডাজমি ০.৫ মিলি/লিটার অথবা এমকোজমি, চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম/লিটার

কার্যকর ছত্রাকনাশক ও প্রয়োগের মাত্রা (প্রতি বিঘা)

1 .সালফার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক (Sulphur 80% WP):

  • পরিমাণ: 600–800 গ্রাম
  • জল: 200–250 লিটার
  • ব্যবহার: স্প্রে করে প্রয়োগ করুন, ৭-১০ দিনের ব্যবধানে প্রয়োজনে আবার।

2. ক্যারাথেন (Karathane 40 EC):

  • পরিমাণ: 80–100 মিলি
  • জল: 200–250 লিটার
  • ব্যবহার: পাতায় স্প্রে করুন, রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র শুরু করুন।

3. ব্যাভিস্টিন (Bavistin 50 WP):

  • পরিমাণ: 100 গ্রাম
  • জল: 200 লিটার
  • ব্যবহার: সকালে বা বিকেলে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় স্প্রে করা ভালো।

 4. টিল্ট 250 EC (Propiconazole):

  • পরিমাণ: 80–100 মিলি
  • জল: 200 লিটার
  • ব্যবহার: ১০ দিন পর পর প্রয়োগ করুন, ২–৩ বার প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৪. আগাম বীজ বপন করুন

রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

৫. রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করুন

যেমন: বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাত।

অতিরিক্ত কিছু পরামর্শ আলু চাষীদের জন্য

  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে রোগ ছড়ানোর সময় বুঝে ব্যবস্থা নিন
  • ক্ষেত নিয়মিত পরিদর্শন করুন
  • চাষাবাদের যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখুন
  •  সুষম সার ব্যবহার করুন যাতে গাছ শক্ত ও রোগ প্রতিরোধী হয়

উপসংহার

আলুর পাউডারী মিলডিউ একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, সঠিক জ্ঞান ও সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই রোগের প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

আলুর পাউডারী মিলডিউ, আলুর রোগ নির্ণয়, মিলডিউ প্রতিকার, আলুর রোগ প্রতিরোধ, ও আলু চাষের টিপস নিয়ে আরও আপডেট পেতে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত পড়ুন

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo