ধান চাষে ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ চেনার উপায় ও প্রতিকার
Open Calculator
ধান চাষে ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ: চেনার উপায় ও প্রতিকার
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ফসল। তবে বিভিন্ন রোগের কারণে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে। ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ (Bacterial Leaf Streak - BLS) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা ধানের ফলন ও গুণমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
রোগের কারণ ও লক্ষণ
জীবাণু: Xanthomonas oryzae pv. oryzicola (ধানের পাতার বাদামি রেখা রোগ | বালাই এবং রোগ)
লক্ষণ:
- পাতার শিরাসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে সরু ও হালকা দাগ দেখা দেয়।
- এই দাগগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে বাদামী বা লালচে রঙ ধারণ করে।
- আক্রান্ত পাতাগুলো শুকিয়ে যায় ও শেষ পর্যন্ত মরে যেতে পারে।
সূর্যের আলোতে পাতার দাগগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা রোগের প্রাথমিক চিহ্ন। (ধানের রোগ - Daily AgriNews)
রোগের বিস্তার ও অনুকূল পরিবেশ
এই রোগ উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সম্পন্ন অঞ্চলে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বৃষ্টিপাত ও বাতাসের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
১. সুষম সার প্রয়োগ
- ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সারের সঠিক পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
- অতিরিক্ত ইউরিয়া সারের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি রোগের প্রকোপ বাড়াতে পারে।
২. পানি ব্যবস্থাপনা
- ক্ষেতের পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার পানি দিতে হবে।
- এটি ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার কমাতে সহায়ক।
৩. বীজ সংরক্ষণ
- ফসল কাটার পর নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলুন।
- ৫৪°C তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট বীজ ভিজিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়।
৪. রাসায়নিক দমন
- প্রতি লিটার পানিতে ৪-৫ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করুন।
- ৭ দিন পর পর এই স্প্রে পুনরাবৃত্তি করুন।
৫. রোগ সহনশীল জাত চাষ
- BRRI ধান ২৮, ৩৩ জাতের ধান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
- এই জাতগুলো চাষ করলে রোগের প্রকোপ কমে।
পরিসংখ্যান ও গবেষণা
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের চাষ করলে ধানের ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, সুষম সার প্রয়োগ ও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা রোগের প্রকোপ ৩০-৪০% কমাতে সহায়ক।
উপসংহার
ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা ধানের উৎপাদন ও গুণমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক রোগ চিহ্নিতকরণ, সুষম সার প্রয়োগ, পানি ব্যবস্থাপনা, রোগ সহনশীল জাতের চাষ ও রাসায়নিক দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কৃষকদের সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা এই রোগের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।