SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

ধান চাষে ধানের উফরা রোগ চাষিদের জন্য বিস্তারিত গাইড

ধান চাষে ধানের উফরা রোগ চাষিদের জন্য বিস্তারিত গাইড

Open Calculator

ধান চাষে ধানের উফরা রোগ: চাষিদের জন্য বিস্তারিত গাইড

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য এবং কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তবে, বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ধানের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ধানের উফরা রোগ (Ufra Disease of Rice), যা Ditylenchus angustus নামক কৃমির কারণে হয়ে থাকে।রোগের পরিচিতি

  • বাংলাদেশে পরিচিতি: ধানের উফরা রোগ বিভিন্ন অঞ্চলে "ডাকপোড়া", "জ্বলে যাওয়া", "পুড়ে যাওয়া", "লোনা লাগা" ইত্যাদি নামে পরিচিত।
  • আক্রান্ত এলাকা: বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা ও ঢাকা জেলায় এই রোগ দেখা যায়। রোপা আমন, বোরো এমনকি আউশ ধানেও এ রোগ দেখা যায়। 

রোগের লক্ষণ

  • পাতার গোড়ায় সাদা দাগ: ধান গাছের পাতার কচি অংশের রস শোষণ করে খাওয়ার ফলে পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে সাদা ছিটেফোটা দাগের মত দেখা যায়।
  • বাদামী দাগ: সাদা দাগ ক্রমেই বাদামী রঙের হয় এবং পরে দাগগুলি বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটা শুকিয়ে ফেলে।​
  • থোড় বা ছড়ার অস্বাভাবিকতা: আক্রান্ত ছড়া মোটেই বের হয় না বা হলেও মোচ খেয়ে অল্প বের হয় ও চিটা হয়। ​

ক্ষতির পরিমাণ

প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির ধান উফরা রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত শতকরা ৪০–১০০ ভাগ ফলন এই রোগের আক্রমণের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ​

রোগের বিস্তার ও পরিবেশ

  • আবহাওয়া: শুকনো আবহাওয়া ও কম তাপমাত্রার জন্য রোরো ধানে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা কম হয়। বাতাসের তাপমাত্রা ২৮-৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড বায়ুর আর্দ্রতা শতকরা ৭০ ভাগের বেশি, ঘনঘন বৃষ্টি ও জমিতে পানি জমে থাকা এ রোগের জন্য বেশি উপযোগী। ​
  • জীবাণুর বিস্তার: এ রোগের জীবাণু পানির স্রোতের সাথে এক জমি থেকে অন্য জমিতে যায়। বিশেষত জলী আমন ধানে এরূপ হয়ে থাকে।
  • আক্রমণের সময়কাল: ফাল্গুন মাস থেকে শুরু হয়ে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে কিছুটা তীব্রতর হয়ে আষাঢ় মাসের শেষের দিকে কমতে থাকে, তবে শ্রাবণ মাসের শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং আশ্বিণ-কার্তিক মাসে বেশ তীব্রতর হয়ে অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে কমতে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা

জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতি

  • ফসল কাটার পর: আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়ে নষ্ট করা।​
  • জমি প্রস্তুতি: ধান ছাড়া ঐ জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষ করা।​
  • শস্য পর্যায় অবলম্বন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।​
  • জমির পানি ব্যবস্থাপনা: আক্রান্ত ক্ষেতের পানি অন্য ক্ষেতে না দেওয়া।​
  • জমি শুকানো: যেখানে সম্ভব বৎসরের প্রথম বৃষ্টির পর জমি চাষ দিয়ে ১৫-২০ দিন ফেলে রাখা (মাটি শুকালে কৃমি মারা যায়)।​

রাসায়নিক পদ্ধতি

  • প্রথম কিস্তি ইউরিয়া সার প্রয়োগের সময়: ইউরিয়ার সাথে ব্রিফার ৫ জি বিঘা প্রতি ১.৩ কেজি করে প্রয়োগ করতে হবে। একর প্রতি মাত্রা ৪ কেজি। ​

সুপারিশকৃত পণ্য

  • ব্রিফার ৫ জি: এই বালাইনাশকটি উফরা রোগের দমন করতে কার্যকর। ​

উপসংহার

ধানের উফরা রোগ একটি মারাত্মক কৃমিজনিত রোগ, যা ধানের উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কৃষকদের উচিত রোগের লক্ষণসমূহ চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জৈবিক, যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতির সমন্বয়ে রোগের বিস্তার রোধ সম্ভব। সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উফরা রোগের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।​

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo