ধান চাষে ধানের উফরা রোগ চাষিদের জন্য বিস্তারিত গাইড
Open Calculator
ধান চাষে ধানের উফরা রোগ: চাষিদের জন্য বিস্তারিত গাইড
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য এবং কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তবে, বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ধানের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ধানের উফরা রোগ (Ufra Disease of Rice), যা Ditylenchus angustus নামক কৃমির কারণে হয়ে থাকে।রোগের পরিচিতি
- বাংলাদেশে পরিচিতি: ধানের উফরা রোগ বিভিন্ন অঞ্চলে "ডাকপোড়া", "জ্বলে যাওয়া", "পুড়ে যাওয়া", "লোনা লাগা" ইত্যাদি নামে পরিচিত।
- আক্রান্ত এলাকা: বৃহত্তর বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা ও ঢাকা জেলায় এই রোগ দেখা যায়। রোপা আমন, বোরো এমনকি আউশ ধানেও এ রোগ দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ
- পাতার গোড়ায় সাদা দাগ: ধান গাছের পাতার কচি অংশের রস শোষণ করে খাওয়ার ফলে পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে সাদা ছিটেফোটা দাগের মত দেখা যায়।
- বাদামী দাগ: সাদা দাগ ক্রমেই বাদামী রঙের হয় এবং পরে দাগগুলি বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটা শুকিয়ে ফেলে।
- থোড় বা ছড়ার অস্বাভাবিকতা: আক্রান্ত ছড়া মোটেই বের হয় না বা হলেও মোচ খেয়ে অল্প বের হয় ও চিটা হয়।
ক্ষতির পরিমাণ
প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির ধান উফরা রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত শতকরা ৪০–১০০ ভাগ ফলন এই রোগের আক্রমণের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
রোগের বিস্তার ও পরিবেশ
- আবহাওয়া: শুকনো আবহাওয়া ও কম তাপমাত্রার জন্য রোরো ধানে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা কম হয়। বাতাসের তাপমাত্রা ২৮-৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড বায়ুর আর্দ্রতা শতকরা ৭০ ভাগের বেশি, ঘনঘন বৃষ্টি ও জমিতে পানি জমে থাকা এ রোগের জন্য বেশি উপযোগী।
- জীবাণুর বিস্তার: এ রোগের জীবাণু পানির স্রোতের সাথে এক জমি থেকে অন্য জমিতে যায়। বিশেষত জলী আমন ধানে এরূপ হয়ে থাকে।
- আক্রমণের সময়কাল: ফাল্গুন মাস থেকে শুরু হয়ে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে কিছুটা তীব্রতর হয়ে আষাঢ় মাসের শেষের দিকে কমতে থাকে, তবে শ্রাবণ মাসের শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং আশ্বিণ-কার্তিক মাসে বেশ তীব্রতর হয়ে অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে কমতে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা
জৈবিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতি
- ফসল কাটার পর: আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়ে নষ্ট করা।
- জমি প্রস্তুতি: ধান ছাড়া ঐ জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষ করা।
- শস্য পর্যায় অবলম্বন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- জমির পানি ব্যবস্থাপনা: আক্রান্ত ক্ষেতের পানি অন্য ক্ষেতে না দেওয়া।
- জমি শুকানো: যেখানে সম্ভব বৎসরের প্রথম বৃষ্টির পর জমি চাষ দিয়ে ১৫-২০ দিন ফেলে রাখা (মাটি শুকালে কৃমি মারা যায়)।
রাসায়নিক পদ্ধতি
সুপারিশকৃত পণ্য
উপসংহার
ধানের উফরা রোগ একটি মারাত্মক কৃমিজনিত রোগ, যা ধানের উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কৃষকদের উচিত রোগের লক্ষণসমূহ চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জৈবিক, যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতির সমন্বয়ে রোগের বিস্তার রোধ সম্ভব। সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উফরা রোগের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।