ধান চাষে পাতার ফোস্কা রোগ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ধান চাষে পাতার ফোস্কা রোগ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য, তবে ধান চাষে বিভিন্ন রোগের মধ্যে পাতার ফোস্কা রোগ (Leaf Scald Disease) একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই রোগের কারণে ধানের পাতা শুকিয়ে যায়, ফলে ফলন হ্রাস পায়। 

রোগের কারণ

পাতার ফোস্কা রোগ একটি ছত্রাকজনিত রোগ, যা Microdochium oryzae ছত্রাকের কারণে হয়। উচ্চ আর্দ্রতা ও অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ এই রোগের বিস্তারে সহায়ক।

রোগের লক্ষণ

• পাতার কিনারা বা মাঝখানে জলছাপের মতো দাগ দেখা যায়।
• দাগগুলি ধীরে ধীরে বড় হয়ে ডিম্বাকৃতি বা আয়তাকার হয় এবং জলপাই রঙ ধারণ করে।
• দাগের মধ্যে গাঢ় ও হালকা বাদামী ডোরাকাটা রেখা থাকে, যা জেব্রার গায়ের মতো দেখায়।
• অতিরিক্ত আক্রমণে পাতা শুকিয়ে খড়ের মতো হয়ে যায়।

রোগ নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি

আক্রান্ত পাতা কেটে স্বচ্ছ পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। যদি কাটা অংশ থেকে পুঁজ বা দুধের মতো পদার্থ বের হয়, তবে এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগ। যদি কিছু না বের হয়, তবে এটি পাতার ফোস্কা রোগ।

প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা

১. জমি প্রস্তুতি ও পরিচর্যা

• জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
• পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ নিশ্চিত করতে হবে।
• লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

২. সার ব্যবস্থাপনা

• সুষম পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করতে হবে।
• অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ এড়িয়ে চলতে হবে। 

৩. বীজ শোধন

• কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে গুলে এক রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

৪. ছত্রাকনাশক প্রয়োগ

• অতিরিক্ত আক্রমণের ক্ষেত্রে সালফার ভিত্তিক ছত্রাকনাশক (যেমন: থিওভিট) ১ কেজি/একর হারে প্রয়োগ করতে হবে।

৫. চারা রোপণ

• ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে (২৫x২০ সেন্টিমিটার)। 

রোগ প্রতিরোধে সুপারিশকৃত ধানের জাত

রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩১ ও ব্রি ধান৪১ চাষ করা যেতে পারে। 

সচেতনতা ও পরামর্শ

• আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
• চারা রোপণের সময় শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
• জমিতে পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। 

উপসংহার

পাতার ফোস্কা রোগ ধানের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা অবলম্বন করে এই রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব। উপরোক্ত পরামর্শগুলি মেনে চললে কৃষকরা এই রোগ থেকে তাদের ফসল রক্ষা করতে পারবেন।