ধানের বাদামী দাগ রোগ লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
Open Calculator
ধানের বাদামী দাগ রোগ: লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। তবে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে ধানের উৎপাদন হ্রাস পায়। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য রোগ হলো ধানের বাদামী দাগ রোগ (Brown Spot Disease)। এই রোগটি সঠিক সময়ে প্রতিরোধ না করলে ধানের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। নিচে এই রোগের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
রোগের পরিচিতি
- রোগের নাম: ধানের বাদামী দাগ রোগ (Brown Spot Disease)
- কারণ: Bipolaris oryzae নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগটি হয়ে থাকে।
- আক্রমণের সময়: ধানের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পরিপক্ক ধান গাছ পর্যন্ত যে কোনো সময় এই রোগের আক্রমণ হতে পারে।
রোগের লক্ষণ
- পাতায় দাগ: প্রথমে পাতায় তিলের দানার মতো ছোট ছোট বাদামী দাগ দেখা যায়।
- দাগের বিস্তার: দাগগুলো বড় হয়ে মাঝখানে সাদা ও কিনারা বাদামী হয়ে যায়। একাধিক দাগ মিলে বড় দাগ সৃষ্টি করে, যা পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
- বীজে প্রভাব: রোগটি বীজেও আক্রমণ করে, ফলে বীজ বাদামী বর্ণ ধারণ করে ও অপুষ্ট হয়।
- ফলনে প্রভাব: আক্রান্ত গাছে শীষে দানা সঠিকভাবে গঠিত হয় না, ফলে ফলন কমে যায়।
রোগের বিস্তার ও অনুকূল পরিবেশ
- আর্দ্রতা: ৮৯% বা তার বেশি আপেক্ষিক আর্দ্রতা এই রোগের বিস্তারে সহায়ক।
- তাপমাত্রা: ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এই রোগের বিস্তারে সহায়ক।
- মাটির পুষ্টি: মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি ও ফসফরাসের আধিক্য এই রোগের বিস্তার বাড়ায়।
- জমির অবস্থা: অনুর্বর জমি ও সেচের অভাব এই রোগের বিস্তার বাড়ায়।
প্রতিকার ও দমন ব্যবস্থাপনা
১. বীজ শোধন
- গরম পানিতে শোধন: বীজ বপনের আগে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- রাসায়নিক শোধন: কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
২. সুষম সার প্রয়োগ
- নাইট্রোজেন ও পটাশ: জমিতে সঠিক পরিমাণ নাইট্রোজেন ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. পানি ব্যবস্থাপনা
- সেচ: জমিতে পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করতে হবে। জমি শুকিয়ে গেলে রোগের প্রকোপ বাড়ে।
৪. জৈব সার ব্যবহার
- জৈব সার: জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং রোগের প্রকোপ কমে।
৫. ছত্রাকনাশক প্রয়োগ
- প্রোপিকোনাজল: রোগ দেখা দিলে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- টেবুকোনাজল: টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধে করণীয়
- রোগ প্রতিরোধী জাত: রোগ প্রতিরোধী ধানের জাত নির্বাচন করে চাষ করতে হবে।
- সঠিক চাষ পদ্ধতি: সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ ও সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
- পর্যবেক্ষণ: ক্ষেতে নিয়মিত পরিদর্শন করে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা মাত্র প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপসংহার
ধানের বাদামী দাগ রোগ একটি মারাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ, যা ধানের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য হারে ক্ষতি করতে পারে। তবে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে এই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব। কৃষকদের উচিত নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করা, সুষম সার প্রয়োগ করা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।