SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

ধানের বাকানি রোগ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ধানের বাকানি রোগ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

Open Calculator

ধানের বাকানি রোগ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ধান চাষে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের মধ্যে বাকানি রোগ একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করে।

রোগের কারণ ও বিস্তার

বাকানি রোগের মূল কারণ হলো ছত্রাকজাতীয় জীবাণু Fusarium moniliforme, যা বীজ, মাটি, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ছত্রাক জিবেরেলিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা গাছের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ এবং উচ্চ তাপমাত্রা এ রোগের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করে ।

রোগের লক্ষণ

  • অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: আক্রান্ত চারা বা গাছ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা হয় এবং লিকলিকে হয়ে পড়ে।
  • রঙ পরিবর্তন: পাতাগুলো হালকা সবুজ বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
  • অস্থানিক শিকড়: গাছের গোড়ার গিঁট থেকে অস্থায়ী শিকড় বের হতে দেখা যায়।
  • গোড়া পচা: গাছের গোড়া পচে গিয়ে ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়।
  • ফলন হ্রাস: আক্রান্ত গাছে ধান হয় না বা চিটা ধান হয়, ফলে উৎপাদনশীলতা কমে যায় ।

রোগের প্রভাব

বাকানি রোগের কারণে ধানের ফলন ৩০% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্ষেতই আক্রান্ত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

✅ বীজ ও চারা ব্যবস্থাপনা

  • বীজ শোধন: বীজ বপনের আগে ১ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম অটিস্টিন ৫০ ডব্লিউপি বা নোইন মিশিয়ে তাতে বীজ বা চারা ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে ।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার: সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। বাজার থেকে বীজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

✅ জমি ও বীজতলা ব্যবস্থাপনা

  • জমি পরিবর্তন: একই জমিতে বারবার বীজতলা তৈরি না করে শস্য পর্যায় পরিবর্তন করতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছ অপসারণ: আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে যাতে রোগের বিস্তার না ঘটে।
  • সার ব্যবস্থাপনা: অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ এড়িয়ে চলতে হবে এবং সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

✅ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন

  • প্রতিরোধী জাত: ব্রি ধান ১৪, ব্রি ধান ১৮, ব্রি ধান ৪২, ব্রি ধান ৪৪ ও ব্রি ধান ৪৫ জাতগুলো বাকানি রোগের প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে ।

সচেতনতা ও কৃষক অভিজ্ঞতা

নেত্রকোনা জেলার কৃষক কাশেম মিয়া জানান, বাজার থেকে প্যাকেটজাত বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করা ধানে বাকানি রোগের আক্রমণ দেখা গেছে, তবে নিজের সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করা জমিতে এ রোগ হয়নি। এটি ইঙ্গিত করে যে, বীজের গুণগত মান রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

উপসংহার

ধানের বাকানি রোগ একটি গুরুতর সমস্যা, যা সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা, সুস্থ বীজ ব্যবহার করা, সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আক্রান্ত গাছ দ্রুত অপসারণ করা। এছাড়া, প্রতিরোধী জাত নির্বাচন ও সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে এ রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব।

চিত্র: বাকানি রোগে আক্রান্ত ও সুস্থ ধানের তুলনা

বৈশিষ্ট্য

সুস্থ ধান গাছ

বাকানি আক্রান্ত ধান গাছ

উচ্চতা

স্বাভাবিক

দ্বিগুণ লম্বা

পাতার রঙ

গাঢ় সবুজ

হালকা সবুজ বা ফ্যাকাশে

শিকড়ের গঠন

স্বাভাবিক

অস্থানিক শিকড় দেখা যায়

ফলন

পূর্ণ ধান

চিটা বা অপুষ্ট ধান

 

সতর্কতা ও পরামর্শ: কৃষকদের উচিত স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ পরিচালনা করা এবং সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo