ধানের বীজ বা দানায় দাগ
Open Calculator
ধানের বীজ বা দানায় দাগ
ধানের বীজ বা দানায় দাগ পড়া বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই দাগ রোগের ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলন কমে যায় এবং বাজারমূল্যও কমে। এই সমস্যা সমাধানে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ধানের বীজে দাগ পড়ার কারণ
ধানের বীজে দাগ পড়ার প্রধান কারণ ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। বিশেষ করে বাদামি দাগ রোগ (Brown Spot) এবং ব্লাস্ট রোগ বীজে দাগের জন্য দায়ী। এছাড়া, খোলপোড়া, পাতাপোড়া ও বাঁকানি রোগও বীজে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগগুলো সাধারণত বীজবাহিত এবং বীজতলা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।
দাগ পড়ার প্রভাব
- অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস: দাগযুক্ত বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়, ফলে চারা দুর্বল হয়।
- ফলন হ্রাস: দাগযুক্ত বীজ থেকে উৎপন্ন গাছের ফলন কমে যায়।
- বাজারমূল্য কমে: দাগযুক্ত ধানের বাজারমূল্য কমে, কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়।
পরিসংখ্যান ও তথ্য
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) এর গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ ও ডাফ অবস্থায় (Milking ও Dough Stage) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম এমওপি ও ৬০ গ্রাম থিওভিট মিশিয়ে স্প্রে করলে প্রায় ১৮% বেশি দাগমুক্ত দানা পাওয়া যায়。
প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল
- বীজ শোধন: বীজ বপনের আগে শোধন করলে বীজবাহিত রোগের সংক্রমণ কমে।
- সুষম সার প্রয়োগ: পটাশ ও দস্তার অভাব পূরণ করে সুষম সার প্রয়োগ করলে গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- রোগমুক্ত চারা রোপণ: রোগমুক্ত চারা রোপণ করলে রোগের বিস্তার কমে।
- জৈব সার ব্যবহার: জৈব সার ব্যবহারে মাটির গুণগত মান উন্নত হয় এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- মাইকোরাইজা ছত্রাক ব্যবহার: মাইকোরাইজা ছত্রাক ধানের শিকড়ের সাথে মিথোজীবী সম্পর্ক গঠন করে গাছের পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়。
চিত্র: ধানের বীজে দাগের প্রভাব (উদাহরণস্বরূপ)
অবস্থা
|
অঙ্কুরোদগম হার (%)
|
ফলন (টন/হেক্টর)
|
দাগযুক্ত বীজ
|
60
|
3.5
|
দাগমুক্ত বীজ
|
90
|
4.5
|
উপসংহার
ধানের বীজে দাগ পড়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা কৃষকের উৎপাদন ও আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকা।
এই তথ্যগুলো কৃষকদের জন্য উপকারী হবে বলে আশা করা যায়। উন্নত প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বীজের গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব।