SofolChashi SofolChashi

  • বগুরা, বাংলাদেশ

  • +880 1956 734 683

  • Mail Support: superadmin@sofolchashi.com

ধানের ব্লাস্ট রোগ

ধানের ব্লাস্ট রোগ

Open Calculator

ধানের ব্লাস্ট রোগ

ধানের ব্লাস্ট রোগ (Rice Blast Disease) বাংলাদেশের ধান উৎপাদনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এই ছত্রাকজনিত রোগটি ধানের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করে এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্লাস্ট রোগের কারণে ধানের ফলন ৮০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে ।

ব্লাস্ট রোগের কারণ ও লক্ষণ

ধানের ব্লাস্ট রোগের প্রধান কারণ হলো ছত্রাক Pyricularia oryzae। এটি সাধারণত উচ্চ আর্দ্রতা, ২৫–২৮°C তাপমাত্রা, এবং নাইট্রোজেন সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিস্তার লাভ করে । 

রোগের প্রধান লক্ষণ:

  1. পাতা ব্লাস্ট: পাতায় ডিম্বাকৃতি সাদা বা বাদামি দাগ দেখা যায়, যা পরে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
  2. গিঁট ব্লাস্ট: ধানের গাঁটে কালো দাগ দেখা দেয়, যা গাছের গিঁট থেকে খসে পড়ার কারণ হতে পারে।
  3. নেক ব্লাস্ট: শীষের গোড়া কালো হয়ে যায় এবং ধান চিটা হয়ে যায়।
  4. কলার ব্লাস্ট: ধানের কলার অঞ্চলে কালো দাগ দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে পচে যেতে পারে ।

বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান

  • ২০২৩ সালে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) জানিয়েছে যে, ব্লাস্ট রোগের কারণে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ৮০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস পেয়েছে।
  • সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৭,৫০০ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়েছে ।

প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা

১. প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার:

ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত যেমন বিনা-২৫ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা বর্তমানে দেশের সেরা জাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে । 

২. সার ব্যবস্থাপনা:

  • সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
  • ইউরিয়া সারের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • পটাশ সার বিঘা প্রতি ৫–৭ কেজি উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে ।

৩. জমির পানি ব্যবস্থাপনা:

জমিতে পানি ধরে রাখা এবং সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. রাসায়নিক প্রতিকার:

  • ট্রাইসাইক্লাজোল (ট্রুপার ৭৫ ডব্লিউপি) @ ০.৭৫ গ্রাম/লিটার।
  • ট্রাইসাইক্লাজোল + প্রোপিকোনাজল (ফিলিয়া ৫২৫ এসই) @ ২ মি.লি./লিটার।
  • থায়োপেনেট মিথাইল (টপসিন এম ৭০ ডব্লিউপি) @ ২ গ্রাম/লিটার।
  • টেবুকোনাজল + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন (নাটিভো) @ ০.৫০ গ্রাম/লিটার।
  • এজোক্সিস্ট্রবিন + ডাইফেনোকোনাজল (এজকর/এমিস্টার টপ) @ ১ মি.লি./লিটার।

উপরোক্ত ছত্রাকনাশকগুলি ১০–১৫ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করা যেতে পারে ।

কৃষকদের জন্য সুপারিশ

  1. বীজ নির্বাচন: রোগমুক্ত ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
  2. ফসল পর্যবেক্ষণ: নিয়মিত ফসল পরিদর্শন করে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করুন।
  3.  ফসলের বৈচিত্র্য: একই জাতের ধান বারবার না চাষ করে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করুন।
  4. জৈব সার ব্যবহার: জৈব সার প্রয়োগ করে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করুন।

উপসংহার

ধানের ব্লাস্ট রোগ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার, এবং সময়মতো প্রতিকার গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব। কৃষকদের সচেতনতা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারই এই রোগ মোকাবেলার মূল চাবিকাঠি।

দাতা সংস্থা

Big Image

সহযোগী সংস্থা

Partner Logo
Partner Logo
Partner Logo