ধানের চারার ব্লাইট রোগ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়
Open Calculator
ধানের চারার ব্লাইট রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়
রোগের পরিচিতি
ধানের চারার ব্লাইট রোগ (Seedling Blight) একটি মারাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ, যা মূলত বীজতলা ও চারার প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রমণ করে। এটি ধানের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে বোরো ও আমন মৌসুমে।
রোগের কারণ
ধানের চারার ব্লাইট রোগ প্রধানত ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট, যেমন Fusarium spp., Rhizoctonia solani, এবং Pythium spp.। এই ছত্রাকগুলো আর্দ্র ও ঠান্ডা পরিবেশে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। অতিরিক্ত সেচ, অপরিষ্কার বীজতলা, এবং অপরিষ্কৃত বীজ এই রোগের বিস্তারে সহায়ক।
রোগের লক্ষণ
- চারা গজানোর পর হঠাৎ করে মারা যায়।
- চারা দুর্বল ও লিকলিকে হয়।
- চারার গায়ে বিবর্ণ দাগ দেখা যায়।
- গোড়ার অংশে কালচে বা বাদামি দাগ দেখা যায়।
ক্ষতির পরিমাণ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) এর তথ্য অনুযায়ী, বোরো মৌসুমে বীজতলায় এই রোগের কারণে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ এবং ট্রেতে চাষের ক্ষেত্রে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ চারা নষ্ট হতে পারে ।
প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়
১. বীজ শোধন
২. বীজতলা ব্যবস্থাপনা
- উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমিতে বীজতলা তৈরি করা।
- বীজতলা সবসময় পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখা।
- সেচের পর অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করা।
৩. সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
- রাতের বেলা বীজতলায় পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা এবং সকালে পানি বের করে দেওয়া।
- বীজতলায় প্লাবন সেচ দেওয়া যেতে পারে, যা ছত্রাকের বিস্তার কমাতে সাহায্য করে ।
৪. সার ব্যবস্থাপনা
- সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
- অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা, কারণ এটি ছত্রাকের বৃদ্ধি বাড়াতে পারে।
৫. প্রতিরোধী জাত ব্যবহার
পরিসংখ্যান ও চিত্র
মৌসুম
|
চারা নষ্টের হার (%)
|
চাষ পদ্ধতি
|
বোরো
|
২৫-৩০%
|
বীজতলা
|
বোরো
|
৭০-৮০%
|
ট্রে চাষ
|
✅ উপসংহার
ধানের চারার ব্লাইট রোগ প্রতিরোধে সঠিক বীজ শোধন, বীজতলা ব্যবস্থাপনা, সেচ ও সার প্রয়োগের সঠিকতা, এবং প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক ভাইয়েরা যদি এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন, তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলন নিশ্চিত করতে পারবেন।