ধানের কান্ড পচা রোগ
Open Calculator
ধানের কান্ড পচা রোগ
ধানের কান্ড পচা রোগ (Stem Rot) বাংলাদেশের ধান চাষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাকজনিত সমস্যা, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে কৃষকের অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনে। এই রোগের সঠিক পরিচিতি, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
রোগের পরিচিতি
- রোগের নাম: ধানের কান্ড পচা রোগ (Stem Rot)
- কারণ: ছত্রাক Sclerotium oryzae
- আক্রমণের সময়: কুশি গজানোর শেষ পর্যায়ে
- আক্রমণের স্থান: ধান গাছের কান্ড ও খোল
রোগের লক্ষণ
- কুশির বাইরের খোলে কালচে গাঢ় অনিয়মিত দাগ দেখা যায়।
- দাগগুলো বড় হয়ে পরস্পর মিশে যায় এবং ছত্রাক কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে।
- আক্রান্ত কুশি থেকে শীষ বের হলেও তা চিটা ও অপুষ্ট হয় ।
ক্ষতির পরিমাণ
ধানের কান্ড পচা রোগের কারণে ফসলের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগের কারণে ধানের ফলন ২০-৩০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা কৃষকের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা
১. রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন:
-
ব্রি ধান ৩১, ৩২, ৩৮, ৪০, ৪১, ৪৭ ইত্যাদি রোগ সহনশীল জাত চাষ করা উচিত ।
২. সার ব্যবস্থাপনা:
- সুষম পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করুন।
- পটাশ সারের পরিমাণ বাড়িয়ে ইউরিয়ার পরিমাণ কমানো উচিত ।
৩. জমি প্রস্তুতি ও পরিচ্ছন্নতা:
- ধান কাটার পর জমিতে থাকা নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলুন।
- জমি চাষ করে শুকিয়ে নিন এবং আগাছা পরিষ্কার রাখুন ।
৪. পানি ব্যবস্থাপনা:
৫. ছত্রাকনাশক প্রয়োগ:
- কপার অক্সিক্লোরাইড (০.৪%) বা কার্বেন্ডাজিম (০.২%) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: নোইন ২ গ্রাম/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন ।
- কুপ্রাভিট (০.৪%) বা কমপ্যানিয়ন (০.২%) ছত্রাকনাশকও কার্যকর ।
রোগ প্রতিরোধী জাতের ফলন তুলনা
নিম্নে কিছু রোগ প্রতিরোধী ধানের জাতের গড় ফলন তুলনা করা হলো:
ধানের জাত
|
গড় ফলন (টন/হেক্টর)
|
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
|
ব্রি ধান ৩১
|
৪.৫
|
উচ্চ
|
ব্রি ধান ৩২
|
৪.৮
|
উচ্চ
|
ব্রি ধান ৪৭
|
৫.০
|
উচ্চ
|
উৎস: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)
✅ কৃষকের জন্য সুপারিশ
- রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করুন।
- সুষম সার ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
- জমি পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
- পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
সঠিক রোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ধানের কান্ড পচা রোগের ক্ষতি কমিয়ে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।