ধানের খোল পঁচা রোগ কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়
Open Calculator
ধানের খোল পঁচা রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ধান একটি প্রধান খাদ্যশস্য। তবে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে ধানের উৎপাদন হ্রাস পায়। এর মধ্যে "খোল পঁচা রোগ" (Sheath Rot) একটি গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাকজনিত রোগ, যা ধানের ফলনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করে থাকে।
রোগের কারণ
ধানের খোল পঁচা রোগের প্রধান কারণ হলো Sarocladium oryzae নামক ছত্রাক। এই ছত্রাক বীজবাহিত এবং গাছের খোল অংশে আক্রমণ করে ।
রোগের বিস্তার
- বীজবাহিত সংক্রমণ: আক্রান্ত বীজ থেকে গাছে এবং গাছ থেকে পুনরায় বীজে ছড়ায়।
- আবহাওয়া: ভ্যাপসা গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়।
- মাজরা পোকা: মাজরা পোকার আক্রমণের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে ছত্রাক সহজে প্রবেশ করে ।
রোগের লক্ষণ
- শীষকে আবৃতকারী পাতার খোলে গোলাকার বা অনিয়মিত দাগ দেখা যায়।
- দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামী রঙের হয়।
- দাগগুলো একত্রে মিশে বড় হয়ে সমস্ত খোলে ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রমণ বেশি হলে শীষ আংশিক বের হয় বা বের হয় না এবং ধান চিটে হয়ে যায় ।
ক্ষতির পরিমাণ
আন্তর্জাতিকভাবে খোল পঁচা রোগের কারণে ধানের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়:
- তাইওয়ান: প্রতি বছর ২০-৮৫% ধান নষ্ট হয়।
- ভিয়েতনাম ও ভারত: ৩০-৮০% ধান নষ্ট হয়।
- জাপান: প্রতি বছর ৫১,০০০-১,২২,০০০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয় এবং এতে ফসলের ক্ষতি হয় ১৬,০০০-৩৫,০০০ টন ।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
১. বীজ শোধন
২. সুষম সার ব্যবহার
- ইউরিয়া: পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে।
- পটাশ (MOP): উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
- জিঙ্ক সালফেট ও ক্যালসিয়াম সালফেট: প্রয়োগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
৩. পানি ব্যবস্থাপনা
৪. ছত্রাকনাশক প্রয়োগ
- প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি): ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- হেক্সাকোনাজল (কনটাফ ৫ ইসি): একই হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
৫. মাজরা পোকা দমন
প্রতিরোধে করণীয়
- রোগ সহনশীল জাত: বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩১ ও ব্রি ধান৩২ চাষ করা যেতে পারে।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষ: জমি পরিষ্কার রাখা এবং আগাছা দমন করা।
- সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ: ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করা উচিত ।
উপসংহার
ধানের খোল পঁচা রোগ একটি গুরুতর সমস্যা, যা সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ধানের উৎপাদন ও গুণগত মান বজায় থাকে।