ধানের খোলপোড়া রোগ একটি সম্যক বিশ্লেষণ ও প্রতিকার
Open Calculator
ধানের খোলপোড়া রোগ: একটি সম্যক বিশ্লেষণ ও প্রতিকার
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য, এবং এর উৎপাদনে খোলপোড়া রোগ (Sheath Blight) একটি মারাত্মক সমস্যা। এই রোগটি Rhizoctonia solani নামক ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট, যা ধানের ফলন ও গুণগত মানে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
রোগের কারণ ও বিস্তার
Rhizoctonia solani ছত্রাকটি মাটিতে অবস্থান করে এবং সেচের পানি বা বাতাসের মাধ্যমে গাছে ছড়ায়। উচ্চ তাপমাত্রা (৩০–৩৫°C) এবং উচ্চ আর্দ্রতা (৮০% বা তার বেশি) এই রোগের বিস্তারে সহায়ক। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ, ঘন চারা রোপণ, এবং অপরিষ্কার চাষাবাদ এই রোগের প্রকোপ বাড়ায় ।
রোগের লক্ষণ
- প্রথমে খোলের নিচে ছোট জলছাপের মতো ধূসর দাগ দেখা যায়।
- দাগের কেন্দ্র খয়েরি ও কিনারা গাঢ় বাদামী হয়।
- দাগগুলো বড় হয়ে খোল ও পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রান্ত খোল দেখতে গোখরো সাপের চামড়ার মতো হয়।
- গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধান চিটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ।
বাংলাদেশে খোলপোড়া রোগের প্রভাব
বোরো মৌসুমে ধানের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৮% আসে, এবং এই মৌসুমে খোলপোড়া রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায় । সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে হেক্টরপ্রতি ২০–২৫% পর্যন্ত ফলন হ্রাস পেতে পারে।
প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা
✅ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন: বিআর-১০, ২২, ২৩, ব্রি ধান-২৯, ৩২, ৩৯, ৪১ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা উচিত ।
- সুষম সার প্রয়োগ: ইউরিয়া সার ২–৩ কিস্তিতে প্রয়োগ এবং পটাশ সার প্রয়োগ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
- পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ: ফসল কাটার পর জমির নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলা এবং জমি পরিষ্কার রাখা।
- সঠিক চারা রোপণ দূরত্ব: ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করা উচিত ।
রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা
- ছত্রাকনাশক প্রয়োগ: রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে নিম্নলিখিত ছত্রাকনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে:
- ফলিকুর ২৫ ইসি: ১ মিলি
- প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি): ১ মিলি
- কনটাফ ৫ ইসি: ১ মিলি
- কার্বেনডাজিম (ব্যাভিস্টিন): ১ গ্রাম)
চিত্র: খোলপোড়া রোগের প্রভাব
মৌসুম
|
আক্রান্ত জমির শতাংশ
|
গড় ফলন হ্রাস (%)
|
বোরো ২০২৩
|
১৫%
|
২০%
|
আমন ২০২৩
|
১০%
|
১৫%
|
বোরো ২০২৪
|
১২%
|
১৮%
|
উৎস: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)
উপসংহার
ধানের খোলপোড়া রোগ একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব। কৃষকদের উচিত রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ, সুষম সার প্রয়োগ, এবং সময়মতো ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে এই রোগের মোকাবিলা করা।