ধানের লক্ষীর গু রোগ (False Smut) বাংলাদেশের ধান চাষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাকজনিত রোগ, যা ফলনের গুণমান ও পরিমাণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এই রোগটি মূলত আমন মৌসুমে বেশি দেখা যায় এবং সঠিক ব্যবস্থা
Open Calculator
ধানের লক্ষীর গু রোগ (False Smut) বাংলাদেশের ধান চাষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাকজনিত রোগ, যা ফলনের গুণমান ও পরিমাণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এই রোগটি মূলত আমন মৌসুমে বেশি দেখা যায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে ২৫% পর্যন্ত ফলন হ্রাস পেতে পারে।
রোগের পরিচিতি ও কারণ
- রোগের নাম: লক্ষীর গু বা ভূয়াঝুল (False Smut)
- কারক ছত্রাক: Ustilaginoidea virens
- আক্রমণের সময়: ধানের দুধ অবস্থার পর থেকে পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময়
- আক্রমণের উপযোগী পরিবেশ:
- উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা (৯০% এর বেশি)
- তাপমাত্রা ২৫–৩৫°C
- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
- অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার (বিশেষ করে ইউরিয়া) ব্যবহার
রোগের লক্ষণ
- ধানের শীষে বড় গুটিকা দেখা যায়, যা প্রাথমিকভাবে সবুজ ও পরে কালচে রঙ ধারণ করে
- গুটিকার ভেতরের অংশ হলুদ-কমলা রঙের হয়
- গুটিকাগুলো আঠালো এবং ১ সেমি বা তার বেশি আকারের হতে পারে
- একটি শীষে সাধারণত কয়েকটি দানা আক্রান্ত হয়
- আক্রান্ত দানার অঙ্কুরোদগম হার কমে যায় এবং ফলনের গুণমান হ্রাস পায়
ক্ষতির পরিমাণ
সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে এই রোগের কারণে ধানের ফলন ২৫% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। আর্দ্র আবহাওয়া ও অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা
✅ জৈবিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতি
- সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ ও বীজ শোধন করে ব্যবহার করা
- রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত চাষ করা
- জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা
- পরিমিত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা
- আক্রান্ত শীষ বা গাছ তুলে পলিব্যাগে আবদ্ধ করে জমি থেকে সরিয়ে ফেলা
রাসায়নিক পদ্ধতি
- ধানের ফুল আসার সময় প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা
- কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন: ব্যাভিস্টিন) ১.৫ গ্রাম/লিটার হারে স্প্রে করা
- প্রয়োজনে ৭ দিন পর পুনরায় স্প্রে করা
রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়কাল
সময়কাল
|
রোগের প্রকোপ
|
জুলাই – আগস্ট
|
উচ্চ
|
সেপ্টেম্বর – অক্টোবর
|
মাঝারি
|
নভেম্বর – ডিসেম্বর
|
নিম্ন
|
কৃষকদের জন্য সুপারিশ
- পরিমিত ইউরিয়া সার ব্যবহার করুন
- জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন
- আক্রান্ত গাছ বা শীষ দ্রুত সরিয়ে ফেলুন
- প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করুন
- সুস্থ ও প্রত্যয়িত বীজ ব্যবহার করুন
সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার মাধ্যমে ধানের লক্ষীর গু রোগের প্রকোপ কমিয়ে ফলনের গুণমান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকদের উচিত নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ ও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।